নিজেকে নিয়ে আবারো বোমা ফাটালেন প্রভা

নিজেকে নিয়ে আবারো বোমা ফাটালেন প্রভা !

অভিনয় ও মডেলিংয়ে সাদিয়া জাহান প্রভা যুক্ত আছেন এক যুগ ধরে। কাজ করেছেন খণ্ড নাটক, ধারাবাহিক নাটক আর বিজ্ঞাপনচিত্রে। ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মনপুরা’ ছবিতে অভিনয় করার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে বাধা দেন বাবা মজিবুর রহমান। এরপর নাটক নিয়েই ব্যস্ত তিনি। গত কয়েক বছরে আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য বিভিন্ন পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কারও গল্প নাকি মুগ্ধ করতে পারেনি প্রভাকে। এবার অঞ্জন আইচের ‘রূপবতী’ ছবির গল্প তাঁকে মুগ্ধ করেছে। বড় পর্দায় অভিনয় করবেন প্রভা। প্রথম আলোর সঙ্গে গতকাল শুক্রবার রাতে কথা বলেন তিনি।

ছবির কাজ শুরু করছেন। কবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন?
এই ছবির কাজের জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হবে। কিছুদিন আগে আমার শরীরে একটা অস্ত্রোপচার হয়। তাই দৌড়াদৌড়ি করার জন্য আমি এখনো ফিট না। ছবির কাজ যে সময় শুরুর পরিকল্পনা ছিল, তা আরও কিছুদিন পরে করতে হবে। অস্ত্রোপচারের পর হঠাৎ আমার ওজন কমে যায়। এখন আবার ওজন বেড়ে গেছে। একটু ফিট হয়ে নিই, তারপর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াব।
অবশেষে দর্শক আপনাকে বড় পর্দায় দেখতে পাবেন। এই ছবিতে রাজি হয়েছেন কেন?
আমি কয়েকটি ছবির গল্প শুনেছি। অনেক পরিচালকের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। এর মধ্যে শুধু শিহাব শাহীনের একটি ছবির চিত্রনাট্য ভালো লেগেছে, কিন্তু ওই ছবির কাজ শুরু হয়নি। এবার অঞ্জন আইচের ‘রূপবতী’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য পড়ে ভালো লেগেছে। আমার মনে হয়েছে, একটা মেয়ের জীবনসংগ্রামের গল্প, এখানে অভিনয় দেখানোর সুযোগ আছে। পুরো গল্পজুড়ে আমি আছি। আমি ঠিক এমন একটা শক্তিশালী গল্পের খোঁজ করেছি। এবার পেয়ে গেলাম।
অভিনয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে?
প্রথম ধাপ হিসেবে ছোট পর্দায় কাজ কমিয়ে দিতে চাই। আমার মনে আছে, ‘মনপুরা’ ছবিতে যখন অভিনয় করার কথা ছিল, তখন চঞ্চল চৌধুরী ভাইয়ের সঙ্গে প্রচুর আলাপ করেছি। নাটকের যাঁরা নিয়মিত ছবিতে অভিনয় করছেন, তাঁদের সবার সঙ্গে কথা বলছি। সবাই আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন।
মডেল এবং অবিনেত্রী ঃ সাদিয়া জাহান প্রভা
ছোট পর্দায় তাহলে কাজ বাদ দেবেন?
কয়েক বছর ধরে আমি মাসের ৩০ দিন শুটিং করছি, তা কিন্তু না। গল্প ভালো লাগলে তবেই কাজ করছি। ধারাবাহিক হাতে গোনা দু-একটি করছি। যাঁদের সঙ্গে ধারাবাহিকে কাজ করছি, গল্পের ভিন্নতা পাচ্ছি। এখনো ভালো গল্প যেমন হচ্ছে, পচা গল্পের কাজও হচ্ছে। আগে যেমন টুকটাক পচা গল্পে কাজ করা হতো, এখন আর এসব মেনে নিতে পারি না। এখন প্রায় নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে সহশিল্পী দেখি, যাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করতে পারি। আমার এমন হয়েছে, সহশিল্পী একটা ক্লোজ শটে আমার চেয়ে ভালো অভিনয় করেছেন, তখন আমি আবার সেই দৃশ্যে নতুন করে শট দিই।
আপনার পছন্দের সহশিল্পী কারা?
সজল, নিশো, নাঈম, তারিক আনাম খান—খুব পছন্দ। তাঁদের সঙ্গে কাজ করার সময় অভিনয়ের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারগুলো খুব সাহায্য করে। অভিনয়ের ক্ষেত্রে আমাকে একটা লাইন ধরিয়ে দিতে হয়, তারপর কাজটা ভালোভাবে করতে পারি। তবে যাঁদের সঙ্গে কাজ করি, তাঁদের সবার সঙ্গেই কাজ করতে ভালো লাগে।
আপনি মাসে ১০-১৫ দিন অভিনয় করেন। বাকি সময় কী করছেন?
প্রচুর ছবি দেখি। বাসার চেয়ে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে বেশি দেখা হয়। শেষ দেখেছি ‘জুমানজি’। আর বাংলাদেশি ছবির মধ্যে দেখেছি ‘হালদা’ ও ‘ডুব’। তৌকীর আহমেদের ‘হালদা’ ছবিতে অবশ্য আমার অভিনয় করার কথা ছিল। তাই গল্পটা আমার জানা ছিল। ছবিতে যাঁরা অভিনয় করেছেন, এক কথায় দুর্দান্ত। আর ‘ডুব’ ছবিটি দেখার সময় মনে হয়েছে, বিদেশি কোনো ছবি দেখছি। গত কয়েক বছরে আমি সবচেয়ে বেশি ছবি দেখেছি টঙ্গীর আনারকলি প্রেক্ষাগৃহে। ঢাকার বাইরের প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখলে সুবিধা হয়, একেবারে সাধারণ মানুষদের রি-অ্যাকশনটা ভালো করে বোঝা যায়। খুব মজা পাই।
প্রথম ছবিতে সহশিল্পী ফেরদৌস। বিষয়টা কেমন?
ফেরদৌস ভাই চমৎকার একজন ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে উল্লেখ করার মতো একটা মুহূর্ত আছে। কয়েক বছর আগে প্রথম আলোর একটা অনুষ্ঠানের মহড়ায় যাওয়ার কথা। কিন্তু উত্তরায় শুটিংয়ের কারণে কারওয়ান বাজারের প্রথম আলো অফিসে যেতে অনেক সময় লেগে যায়। ফেরদৌস ভাই অনেক আগে এসে বসে ছিলেন। আমি দেরিতে আসার পরও ফেরদৌস ভাই চমৎকারভাবে পরিবেশটাকে সামলে নিয়েছিলেন, আমি বোকা বনে যাই। সেই চমৎকার মানুষটা আমার সহশিল্পী, এটা দারুণ অনুভূতি। আমি তাঁর ব্যক্তিত্বের ভক্ত। ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবিটি যখন দেখি, তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। এর বাইরে ‘চন্দ্রকথা’ আর ‘আমার আছে জল’ ছবিটি দেখেছি।
‘রূপবতী’ একজন নারীর সংগ্রামী জীবনের গল্প নিয়ে। আপনার নিজের জীবনে কঠিন সময় কোনটি?
আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় ২০১০ সালে। মোটামুটি টানা চার-পাঁচ মাস বাসা থেকেই বের হইনি। বলতে গেলে রুমবন্ধী ছিলাম। আমার ভাই, বাবা-মা—এই ছিল আমার দুনিয়া।
এই কঠিন সময়টা কীভাবে কাটিয়ে উঠেছেন?
আমার ভাই, বাবা-মা আমাকে সময় দিয়েছেন। ফোনে কিছু বন্ধু আমাকে সাপোর্ট করেছে। বন্ধুদের মধ্যে আত্মী সবচেয়ে বেশি মানসিকভাবে সাপোর্ট করেছে। প্রচুর সময় দিয়েছে। আমার মনে আছে, শুধু আমার জন্য আত্মী সেমিস্টার ড্রপ দিয়েছে। আরেকটা ব্যাপার আমাকে সবচেয়ে বেশি শক্তি জোগায়, আত্মশক্তি। নিজের প্রতি নিজের শক্তি। তবে মাঝেমধ্যে হতাশ হতাম। আমিও তো রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ। কেউ একজন ভুল বুঝলে, চেষ্টা করতাম ব্যাখ্যা করতে—এটা আমি না, আমি ওটা না। বলতে পারেন, বৃথা চেষ্টা মাঝে মাঝে করে ফেলি। আমি মনে করি, যাঁরা ভালোবাসার, তাঁরা একটুতে বাসে। জোর গলায় বলতে চাই, আমি কোনো বড় অপরাধ করিনি। আমার বিবেককে নাড়া দেবে, এমন কোনো অপরাধ করিনি। এরপরও সব সময় দেখি, আমি বুঝি জগতে সবচেয়ে দুর্ভাগা।
নিজেকে কেন দুর্ভাগা মনে করছেন?
জীবনে অনেক দেখেছি, বিনা অপরাধে দোষী হয়েছি। সেটা আমার বোকামি হতে পারে। আমি কৌশলী নই। খুব অভিমানী। খুব স্পষ্টভাষী। আমাকে বোঝা খুব সহজ। এসব কারণে বারবার আমাকে ঠকতে হয়েছে। 

No comments

Powered by Blogger.